![]() |
" বৃদ্ধাশ্রম "-এই শব্দটির সাথে আমাদের পরিচয় একটু না বাচক অর্থে।আমরা বৃদ্ধাশ্রম মানেই ধরে নিই মা-বাবার প্রতি একটা অবহেলা বা দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো। কিন্তু এই দ্রুতগতির কর্মজীবন ও ছোট পরিবার এর কারনে আমরা নিজেরাই বেশিরভাগ সময় বাড়ির বৃদ্ধ-সদস্যের সঠিক যত্ন করতে অসমর্থ হই।তাই বৃদ্ধ বয়সের মানুষদের জন্য আমাদের এই প্রয়াস।আশাকরি "বৃদ্ধাশ্রম " সম্পর্কে সমাজের তথাকথিত ভুল ধারণাকে আমরা দুর করতে সমর্থ হতে পারব।আমরা শুধু বৃদ্ধাশ্রম নই, আমরা "বার্ধক্যের বন্ধু"।।
|
|
![]() |
অনন্তকালের শ্রুতি কূটশব্দ বৃদ্ধাবাস / বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধাবাস-ছিঃ,বৃদ্ধাশ্রম-কি মানসিকতা বাবা,এত কষ্ট করে সন্তান মানুষ করা,তার পরিণতি এই? শেষে ওনাদের স্থান বৃদ্ধাবাস?
এই উক্তি সাধারণত আমাদের চারপাশে সভ্য, সুশীল ,বুদ্ধিজীবী সমাজের তথাকথিত কিছু মানুষজনের মুখ থেকে প্রায়ই শোনা যায়।
আমাদের অতীতের সমাজ তদসহ বর্তমান সমাজ খুব সহজেই একে অন্যের উপরে দোষারোপে ভীষণ পটু।
যেকোনো বাস্তব পরিস্থিতি বা অবস্থা বিবেচনা না করে অন্যের উপরে দোষ বা দায় চাপাতে ব্যস্ত ।
যদি সেটা হয় অন্যের সফল সন্তান কন্যা তথা পুত্র।। |
|
![]() |
কর্মজীবন পেরিয়ে দশ বৎসর- বৃদ্ধাবাস বা বৃদ্ধাশ্রম এর হাত ধরার যৌক্তিকতা বলতে গেলে যে কারন টা সবার আগে আসে- যে সন্তানদের দেখা স্বপ্নের লক্ষে পৌছে দিতে আমাদের এই কর্ম ব্যস্ততা , তারই ফল স্বরূপ আজ সেই সন্তানদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বা বিদেশে দিবারাত্রি কর্মব্যস্ত জীবন। অনেকেই আমাদের এই যৌক্তিকতা নির্বিচারে কেটে দিতে পারেন। আমাদের জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাদেরকে আকরে ধরা শুধুমাত্র আমাদের আর সন্তানদের দেখা স্বপ্ন সফল হবার পথ অমসৃণ করে দেওয়া।"বার্ধক্যের বন্ধুর" হাত ধরে মসৃণ হয়েছে আমাদের উভয়ের জীবনের চলারপথ গুলি ।এই অভিজ্ঞতাই বলে আজকের দিনে দাড়িয়ে বৃদ্ধাশ্রম বা বৃদ্ধাবাস কোনকষ্টের হাতছানি না ,বরং হতে পারে "বার্ধক্যের বন্ধু"।।
|
|
![]() |
বর্তমান সমাজের যে রূপান্তর তা শুধু আর্থ সামাজিক তা নয় ,মানসিক ও বটে।আর এই মানসিক পরিবর্তন ই বদলে দিয়েছে
আমাদের জীবনধারার গতিকে।এই পরিবর্তনের যেমন আছে ইতি বাচক দিক,ঠিক তেমনি আছে কিছু নেতিবাচক দিক।।জীবন ধারার এই পরিবর্তন সমাজের প্রতিটি স্তরে ঘটেছে।।আবার তা পরিলিক্ষত হয়েছে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে,যার ব্যাতিক্রম আমাদের সমাজের প্রবীণ নাগরিকরাও নয়।জীবনযাত্রার এই পরিবর্তনের ফলেই বৃদ্ধাশ্রম শব্দটি আজ যেমন পরিচিত তেমনি প্রয়োজনীয় বলা যায়।বর্তমান সময় থেকে কয়েক দশক পিছিয়ে গেলে আমরা যে যৌথ পরিবার দেখতে পাই সেখানে মানুষ তার সন্তান, ভাই, বোন বা আত্মীয়দের সাথে একই বাড়িতে বা আশেপাশে থাকতেন সেখানে তারা নিজেদের সুখ দুঃখ ছারাও নিজেদের স্বাস্থ্য এর মত জটিল সমস্যাও সবাই মিলে সমাধান করতেন।এর ফল স্বরূপ 'একাকীত্ব ' বা হতাশা' নামক বর্তমান সমস্যা বা ব্যাধির উপস্থিতি ছিলনা বললেই সঠিক বলা হবে। জীবনধারার গলির এই পরিবর্তনের সামনে দাঁড়িয়ে সমস্ত একাকীত্ব কে কাটিয়ে সুস্থ এবং নিশ্চিন্ত জীবন কাটানোর জন্যহাত ধরতে হবে সঠিক বন্ধুর।এখানেই আমাদের সার্থকতা - 'দেবরূপ' নিবাস' বৃদ্ধাবাস।।
|
|
![]() |
সন্তানেরা ভাবতেই পারেনা যে তাদের মা-বাবা বার্ধক্যে পৌছেছেন-তাদের মা-বাবার কথা বলার সঙ্গী, তাদের বয়সের একটা পরিবেশ দরকার যেখানে সেই মা-বাবা প্রাণ খুলে হাসতে পারবেন।এই সন্তানের মা বাবা এই সন্তনদের জন্য শৈশব দিয়েছেন, ভাল স্কুল দিয়েছেন। ভাল শিক্ষক দিয়েছেন,ভাল জামা কাপড়, ভাল খাবার দিয়েছেন। সর্বপরি প্রাণ খুলে হাসার জন্য জীবনসঙ্গী দিয়েছেন।আজকের সন্তান তো ভাবতেই পারেন-তাদের মা-বাবা বার্ধক্যে পৌছে যেন একাকীত্বে বা মনোকষ্টে না ভোগে।সন্তানরাতো ভাবতেই পারেন আমাদের মা বাবা যেন প্রাণ খুলে হাসতে পারেন তাদেরবয়সের বন্ধুদের সঙ্গে- তাই বৃদ্ধাশ্রম বা বৃদ্ধাবাস কে নতুন করে "বার্ধক্যের বন্ধু " তো ভাবা যেতেই পারে।।
|
|
![]() |
বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য' এই কথাটি শিক্ষিত বা অশিক্ষিত প্রত্যেকের মনের মধ্যে একটি ই ধারণা তৈরি করে দেয়,যে তিনি করুনার পাত্র বা পাত্রী। কেননা তিনি সন্তান দ্বারা পরিত্যক্ত বা অবহেলিত মা অথবা বাবা।কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা, বৃদ্ধাশ্রমের সদস্যদের বিভিন্ন রুপ গুলিকে। যেমন- বাল্য বিধবা, সন্তান হারা মা বা বাবা,অবিবাহিত বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা কোন মানুষ,আবার বিভিন্ন রকম রোগাগ্রস্থ মানুষ যাদের উপযুক্ত পরিচর্যা করার লোকের সত্যি ই অভাব বাড়িতে। বৃদ্ধাশ্রমের দরজায় উকি দিয়ে যখন এই সমস্ত বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা সদস্যদের আমরা দেখতে পাই,তখন সত্যিই মনে হয়, বৃদ্ধাশ্রম নয় বরং বার্ধক্যের বন্ধুর হাত ধরেই এরা পার হতে চান জীবনের বাকি পথটা। আর চলার পথের এই অভিজ্ঞতা ‘দেবরুপ নিবাস' কে পরিণতি দিয়েছে শুধুমাত্র বৃদ্ধাশ্রম নয়, বরং‘বার্ধক্যের বন্ধু' রূপে।
|
|
![]() |
বিগত দশকের জীবন ধারার গতি আর আজকের জীবনধারা গতির মধ্যে যে বিস্তর তফাৎ,সেটা সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ ই এক কথায় মেনে নেবেন আশা করা যায়।জীবন ধারার গতির এই পরিবর্তনের সামনে দাঁড়িয়ে, সেদিনের ' বৃদ্ধাশ্রম’ নামক গানটিকে সামনে রেখে,আমরা মাননীয় শ্রী নচিকেতা বাবুর কাছে দাবি করতেই পারি- আরেকটি জীবনমুখী গানের, যার মধ্যে ফুটে উঠবে-বৃদ্ধাশ্রম বাধ্যতা নয়, বরং প্রিয়জনের - প্রয়োজন এর ঠিকানা। যেখানে রঙিন জীবনের হাতছানি না থাকলেও ,অভাব থাকেনা প্রায় সমবয়সি মানুষের সাথে মাথা তুলে বেঁচে থাকার রসদের।এই দাবি থেকেই ' দেবরুপ নিবাস’ শুধুমাত্র বৃদ্ধাশ্রম নয় , বরং' বার্ধক্যের বন্ধু'।
|
|
![]() |
“বৃদ্ধাশ্রম" শব্দটিকে নিছক শব্দ না বলে “ পরিস্থিতি" বলা টাই শ্রেয়। এই কথাটি র সত্যতা বিচার করতে গেলে কিছু আলোচনার প্রয়োজন।আমরা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এই শব্দটির সাথে পরিচয় ঘটাই অথবা আমাদের হয়ে অন্য কেউ পরিচয় করিয়ে দেন। মানুষ মাত্রই কিছু স্বপ্ন বা আবেগ কে মনের মধ্যে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকেন, আর বিশ্বাস করেন এই স্বপ্ন গুলি তার বেঁচে থাকার অবলম্বন। তার মধ্যে জীবনের শেষ দিনগুলি নিজের সন্তানের বা নিকট আত্মীয়ের সাথে কাটাবেন,এটি অন্যতম। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে- বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে, এই স্বপ্ন বা আবেগ গুলি সত্যি করা সম্ভব হয়না। কারণ, সেগুলি আমাদের-ই প্রিয়জনের স্বপ্ন পূরণে অনেক ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই ভেঙে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে বুকের মধ্যে শুধুমাত্র সন্তান বা আত্মীয় ই নয়- বন্ধু ও ধরে রাখতে পারে। এই স্বপ্ন বা আবেগ গুলিকে যথার্থ মর্যাদা দিতেই “দেবরূপ নিবাস" শুধুমাত্র বৃদ্ধাশ্রম নয় বরং“ বার্ধক্যের বন্ধু"।
|
|
![]() |
পৃথিবীতে যত কিছু সুন্দর তার মধ্যে রামধনুর কথা বলতেই হয়।কিন্তু রামধনুর মধ্যে সাতটি রং উপস্থিত থাকলেও কালো রং কে দেখতে পাইনা।অথচ কালোর রং যে আছে, আমরা সকলেই জানি।ঠিক সে ভাবেই সমস্ত সক্ষম,
সচল মানুষ গুলির মধ্যে আমরা অনেকক্ষেত্রেই ভুলে যাই শারীরিক মানসিক 'প্রতিবন্ধী' মানুষগুলির কথা।যাদের সত্যি সাহায্যের প্রয়োজন।মা-বাবা অথবা নিকট আত্মীয় দের পক্ষে এই সমস্ত প্রতিবন্ধী মানুষ গুলির যথোপযুক্ত যত্ন করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়না।এক্ষেত্রে তাদের হাত ধরতেই হবে এরকম কোন মানবিক প্রতিষ্ঠান এর,যারা বন্ধুর মত হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
|
|
![]() |
এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি," দেবরূপ নিবাস" শুধুমাত্র এই সমস্ত প্রতিবন্ধী মানুষদের ই নয় তাদের পরিবারের মানুষগুলিও বন্ধু।দেবরূপ নিবাস তাই তো শুধু মাত্র বৃদ্ধাবাস নয় বরং বার্ধক্যের বন্ধু।এই ভাবনা থেকেই "দেবরূপ নিবাস" এর আরেকটি নতুন পথে চলা " প্রতিবন্ধী" মানুষদের নিয়ে।
|
|